রঞ্জি ট্রফি তার সাথে আইপিএলে ভাল খেলার পর ইন্ডিয়ান দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। ১ম সুযোগই কাজে লাগালেন যশস্বী জয়সওয়াল। অভিষেক ম্যাচের টুপি পেয়েছিলেন রোহিত শর্মার হাত থেকে।
অভিষেক টেস্টেই শতরান করলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ভারতীয় দলে ওনাকে নেওয়ার ডিসিশন যে দোষ ছিল না, তা বুঝিয়ে দিলেন ২১ বর্ষের কিশোর ওপেনার। রঞ্জি প্রাইজ এবং আইপিএলে ভাল খেলার পর ভারতীয় দলে চান্স পেয়েছিলেন। ১ম সুযোগই কাজে লাগালেন তিনি। অভিষেক ম্যাচের টুপি পেয়েছিলেন রোহিত শর্মার হাত থেকে। তাঁর সাথে জুটি গড়েই শতরান করলেন যশস্বী। রোহিতও অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ১ম ইনিংসের রানও (১৫০) টপকে গিয়েছে ভারত।
যশস্বী ১৭তম ভারতীয় ব্যাটার যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করলেন। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন লালা অমরনাথ। ১৯৩৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের ১ম ম্যাচে শতরান করেছিলেন। এর পর একের অধিক ক্রিকেটার নিজের ১ম টেস্টে শতরান করেছেন। মধ্যে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সহবাগ, সুরেশ রায়না, আগা ধাওয়ানেরা রয়েছেন। ২০২১ সালে অভিষেক হয় শ্রেয়স আয়ারের। তিনিই সম্পন্ন ভারতীয় যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন। তার আগে ২০১৮ সালে পৃথ্বী শ অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন।
এ বারের আইপিএলে শতরান করেছিলেন যশস্বী। ১৪ ম্যাচে ৬২৫ রান করেছিলেন। রঞ্জি ট্রফিতেও ধারাবাহিক ভাবে রান করছিলেন। এইজন্য নবযৌবনপ্রাপ্ত ওপেনারের চান্স পাওয়া ছিল টাইমের অপেক্ষা। ক্যারিবিয়ান সফরে ডাক পাওয়ার পর এইজন্য প্রথম স্বপ্নপূরণ হয়ে গিয়েছিল। সে দিন ফোনটা পেয়ে আস্থা করতে পারছিলেন না। সত্যিই উনি ইন্ডিয়ান দলে সুযোগ পেলেন! এ এক স্বপ্নপূরণ। যে স্বপ্ন দেখে একটা ফেমেলি উত্তরপ্রদেশ ত্যাগ মুম্বই চলে এসেছিল। সেই কল্পনা সত্যি হল। যশস্বী জয়সওয়াল ভারতের টেস্ট দলে চান্স পেয়েছেন। যে সংবাদ শুনে কেঁদেই ফেলেছিলেন তাঁর বাবা। এত দিনের সব কষ্ট বর্তমান মজা হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। বৃহস্পতিবার সেই আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে ছেলের শতরান দেখার পর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মাটিতে যশস্বীই প্রথম ভারতীয় যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করলেন।
গত মরসুমে একের পর এক ম্যাচে খারাপ খেলার কারণে টিম থেকেই বাদ পড়েছিলেন। এই মুহূর্তে উনি এতটাই ভাল ছন্দে, যে টিম থেকে বাদ দেওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারছেন না। মাসের ব্যবধানে যশস্বীর জীবনটা বদলে গিয়েছে এ ভাবেই। কিন্তু সেই সংস্কার এক দিনে আসেনি। এর পিছনে জড়িয়ে বিদ্যমান কঠোর পরিশ্রমও।
মুম্বই থেকে তালেগাঁওয়ে গিয়ে অনুশীলন করার জানা গিয়েছে আগেই। কী ভাবে ওই স্থান অনুশীলন করতেন যশস্বী তা-ও জানা গিয়েছে। ঘরোয়া মরসুমের শেষে গত বছর মুম্বই থেকে নাগপুরের তালেগাঁওয়ে রাজস্থান রয়্যালসের ডিরেক্টর জুবিন ভারুচার অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করার জন্য যান যশস্বী। ওই স্থান গিয়ে নিবিড় অনুশীলনে ডুবিয়ে দেন নিজেকে।
প্রতি দিন সেই অ্যাকাডেমিতে পাঁচশোটি থ্রোডাউন নিতেন যশস্বী। সিমেন্টের পিচে অনুশীলন করতেন ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বলে। বেশ কতিপয় বার আঘাতও খেয়েছেন শরীরে। এ ছাড়া লাল মাটি তার সাথে কালো মাটির পিচে আলাদা করে অনুশীলন করেন। অফসাইডে শট খেলতে যশস্বীর কিছুটা দুর্বলতা ছিল। সেটি কাটিয়ে ওঠেন নাগাড়ে অনুশীলন করে। এ ছাড়া নিজের পায়ের আরও ব্যবহার, সুইপ মারা এবং সুইচ হিটে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। অধুনা পিচের যে কোনও জায়গায় বল ফেললে তা মাঠের বাইরে পাঠাতে পারেন তিনি।
শুনেছিলেন আর একজনের পরামর্শ। তিনি সূর্যকুমার যাদব। আইপিএলে একটি ম্যাচের পর সূয্যি ওনাকে বলেছিলেন, “নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করতে থাকো। মাঠে গিয়ে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ফলো করো। ক্রিকেট শুধু মাত্র মস্তিষ্কের খেলা।”
একই সাথে বড়দের পরামর্শ তো রয়েছেই। যশস্বী বলেছিলেন, “ক্রিকেটীয় পরিবেশের ভিতরে থাকতে ভালবাসি। আমার চারদিকে প্রচুর কিংবদন্তি ক্রিকেটার রয়েছে। চান্স পেলেই এমএস ভাই, বিরাট ভাই, রোহিত ভাই, জস ভাই, সঞ্জু ভাইদের সাথে কথা বলি। জেনে নিই কী ভাবে নিজেকে শান্ত রাখা যায়। কী ভাবে ভাবনাচিন্তায় বদল আনা যায়। সব সময় কিছু শেখার চেষ্টা করে খেলায় উন্নতি করার ট্রাই করি।” শুধু খেলা নয়, তাঁর শেখার ট্রাই থাকে সব কাজেই। ক্রিকেট ব্যতীতও এইরকম ১টি ব্যপারে উন্নতি হয়েছে তাঁর। তা হল ইংরেজিতে কথা বলা। যশস্বীর সাফ কথা, “দলের সবাই ইংরেজিতে কথা বলে। আমি পিছিয়ে থাকি কী করে?” এই জেদই যশস্বীকে অবশিষ্ট দের হতে ছাপিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।