বালির দুই বুথ হতে ছিনতাই ২৭৬টি ব্যালট

Staff Reporter

বালির দুই বুথ হতে ছিনতাই ২৭৬টি ব্যালট, সেখানেও কি পুনর্নির্বাচনের আদেশ দেবে হাই কোর্ট?

সাঁকরাইলের মতো প্রায় একই ঘটনা ঘটায় বালি-জগাছা ব্লকের ওই দুই বুথেও কি নির্বাচন সাময়িকভাবে বন্ধ করে তদন্তের নির্দেশ দেবে আদালত? না কি, নির্বাচন কমিশন নতুন করে ইলেকশন করানোর নির্দেশ দেবে?

গত ১১ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের গণনার দিন বালি-জগাছা ব্লকের পরিমাপ কেন্দ্র দুর্গাপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যামন্দিরের দু’টি বুথ হতে ছিনতাই হয়ে গিয়ে ছিল মোট ২৭৬টি ব্যালট পেপার। ওই ঘটনায় পরের দিন পুলিশের কাছেএফআইআর দায়ের করেন স্থানীয় বিডিও। এর পাশাপাশি, ঘটনাটি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারালয় বিডিও-কে আদেশ দিয়েছে, ওই দিন ঠিক কী হয়েছিল, তা তথ্য-সহ আজ, শুক্রবার কোর্টে দাখিল করার জন্য হবে। এ দিকে, ব্যালটছিনতাইয়ের ঘটনায় রাজ্য নির্বাচন ডিস্কাউন্ট হাওড়ার সাঁকরাইলের ১৫টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়ে বুধবার রাতেরবেলা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, সাঁকরাইলের মতো প্রায় একই ঘটনা ঘটায় বালি-জগাছা ব্লকের ওই দুই বুথেও কি নির্বাচন স্থগিত করে তদন্তের নির্দেশ দেবে আদালত? না কি, নির্বাচন কমিশন নিউ করে ভোট করানোর আদেশ দেবে? মূলত এই দু’টি প্রশ্নই বৃহস্পতিবার দিনভর ঘুরপাক খেল হাওড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশ মহলে।

উল্লেখ্য, ১১ তারিখ সকাল হতে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে বালি-জগাছা ব্লকের দুর্গাপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যামন্দিরের সম্মুখে হাড্ডাহাড্ডি যুদ্ধ চলেছিল শাসক টিম তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে। হাতাহাতি, পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ, পথ অবরোধ— কিছুই বাদ যায়নি। যার জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বালি-জগাছা ব্লক। দু’দলের ভিতরে দফায় দফায় মারপিটে উভয় পক্ষের কমপক্ষে চার জন আঘাতগ্রস্থ হয়েছিলেন। এরই ভিতরে ওই দিন দুপুরে গণনা কেন্দ্রের পাঁচিলের সাইডে একটা শুকনো নালায় তিন বান্ডিল ভোট দেওয়া (পোলড) ব্যালট পেপার উদ্ধারকে ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। সিপিএম দাবি করে, ওই ব্যালট পেপারগুলিতে দেখা গিয়েছে, তাদের প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছেন মানুষ। একারণে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় শাসক দল চূড়ান্ত গণনার প্রথমে ওই ব্যালট পেপারগুলি ফেলে দিয়েছে।

Advertisement

যদিও জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, বালির ৭ এবং ৮ নম্বর বুথ থেকে ছিনতাই হয়ে গিয়ে ছিল যথাক্রমে ৭৩টি ও ২০৩টি ব্যালট পেপার। যার ভিতরে ৭ নম্বর বুথে গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩৫৪টি ভোট, বিজেপি পেয়েছিল ৭২টি ভোট তার সাথে নির্দল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৮৬। যে নিমিত্ত ছিনতাই হওয়া ব্যালটের সঙ্গে বিজেপি তার সাথে নির্দল প্রার্থীর স্বীকৃত ভোটের যোগফল তৃণমূল প্রার্থীর স্বীকৃত ভোটের চেয়ে কম ছিল, সেই কারণে ওই বুথে তৃণমূলকে জয়লাভকারী ঘোষণা করা হয়। সেইম ভাবে ৮ নম্বর বুথেও বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীর গৃহীত ভোটের সঙ্গে ছিনতাই হওয়া ২০৩টি ব্যালটের যা যোগফল ছিল, তার চেয়ে বেশি ইলেকশন পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। একারণে ওই কেন্দ্রেও শাসক দলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।

এই ঘটনার প্রতিবাদে গণনার দিনেই সিপিএমের সব প্রতিনিধি পরিমাপ কেন্দ্র হতে বেরিয়ে আসেন। পরে তাঁরা জানান, ব্যাপারটা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন। এর পরেই এক লোক ব্যালট পেপার উদ্ধারের ঘটনাটি নিয়ে কলকাতা হ্যালো কোর্টে মামলা করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার হাই কোর্ট বালি-জগাছার বিডিও-কে নির্দেশ দেয়, ১১ তারিখের সমস্ত ভিডিয়ো ফুটেজ তার সাথে প্রামাণ্য নথিপত্র নিয়ে শুক্রবার তাঁকে আইনজীবী হাজির হতে হবে।

হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই দু’টি বুথে ব্যালট ছিনতাই হলেও উভয় ক্ষেত্রেই দু’জন প্রার্থী শতাধিক ও দু’শতাধিক ভোটে জয়লাভ করায় সংখ্যার নিয়মেই ওখানে ছিনতাই হওয়া ব্যালটের দাম পর্যাপ্ত গিয়েছে। অর্থাৎ, ছিনতাই হওয়া ব্যালটের সংখ্যা ভোটের ব্যবধানের হিসাবের বাইরে রাখলেও বিজয়ী প্রার্থীরাই জিতবেন। তাই ওই দুই বুথে পুনর্নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে।’’

Advertisement

তবে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, বিষয়টি যে নিমিত্ত বিচারাধীন, এজন্য আদালতের নির্দেশ মতো কাজ হবে। সম্প্রতি সাঁকরাইলের মতো বালি-জগাছা ব্লকের ওই দুই বুথে পুনর্নির্বাচন হয় কি না, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

আরও পড়ুন

Latest articles

Leave a Comment

%d bloggers like this: