সংগঠিত লুট দেখছে বিরোধীরা

Staff Reporter

সংগঠিত লুট দেখছে বিরোধীরা, দ্বেষ ‘নামমাত্র’, ইলেকশন হয়েছে উৎসবের মেজাজেই, দাবি তৃণমূলের

রাজনৈতিক তরজা, আইনি লড়াই তার সাথে তার ভিত্তিতে প্রাপ্ত পদক্ষেপের পরেও নির্বাচন ঘিরে অশান্তি ঠেকানো গেল না। এ দিন ইলেকশন শেষের পর হতে সেই অশান্তি নিয়ে নিউ করে তরজা আরম্ভ হয়েছে।

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট উৎসবের মেজাজে সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে বলেই দাবি করল তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার ভোটের দিন ১৮ জনের মৃত্যু, ভাঙচুর তার সাথে অগ্নিসংযোগের পরেও টিমের এই দাবির পক্ষে তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, যে অশান্তির কথা বলা হচ্ছে, তা সামগ্রিকতার নিরিখে এক শতাংশেরও কম জায়গায় হয়েছে। বিরোধীরা অবশ্য একযোগে ভোটলুঠের অভিযোগে সরব হয়েছে। এই অভিযোগে এ দিন রাত্রিতে রাজ্য নির্বাচন ডিস্কাউন্ট দফতরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

রাজনৈতিক তরজা, আইনি লড়াই এবং তার ভিত্তিতে গৃহীত পদক্ষেপের পরেও নির্বাচন ঘিরে অশান্তি ঠেকানো গেল না। এ দিন ইলেকশন শেষের পর হতে সেই অশান্তি নিয়ে নিউ করে তরজা শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের সমস্ত নালিশ নস্যাৎ করে দিয়েছে শাসক তৃণমূল। ইলেকশন শেষের পরই দলের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে বলা হয়েছে, ইলেকশন হয়েছে নির্বঘ্নে। রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শশাঙ্ক পাঁজা এবং রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, ৬১ হাজার ৫৩৯ টি বুথে ইলেকশন গ্রহণ হয়েছে। তার ভিতরে মাত্র ৬০ টি জায়গার অশান্তি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে বিরোধীরা। কুণালের কথায়, ‘‘আটটি ঠাঁই ছাড়া সবই ছোটখাটো অশান্তি।’’

Advertisement

বিরোধীরা অবশ্য এ দজিনের নির্বাচন নিয়ে কাঠগড়ায় তুলেছে শাসক শিবিরকে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘‘বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ভোট হয়নি। লুঠ হয়েছে। হাই কোর্টে যাব।’’ সেই সঙ্গেই রাজ্যে ৩৫৫ বা ৩৫৬ জারির দাবিও তুলেছেন তিনি। এ দিন বেশির ভাগ জায়গায় তৃণমূলের সাথে সংঘর্ষ হয়ে গিয়েছে সিপিএম তার সাথে কংগ্রেসের। সিপিএমের রাজ্য এডিটর মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ভোটের দিন যা হল, তার দায় মুখ্যমন্ত্রী আকর্ষণ বন্দোপাধ্যায় ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের। কিন্তু এত হুমকি, মারধর, গুলি, বোমার সামনেও বাংলার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।’’ আর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘দিদি, আপনি জিতে গিয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন! রাতেই ব্যালট বুথের বাইরে চলে গিয়েছে। ছাপ্পা মেরে তা আবার বুথে নিয়ে এসেছে। ইলেকশনের নামে এ জাতীয় কলুষতা বাংলার ইতিহাসে কোনো সময়েই হয়নি।’’

ভোট পর্ব ঘিরে যে রেষারেষি ও উত্তেজনা হয়েছে, তাকে খুবই সামান্য বলে উল্লেখ করলেও তার জন্য বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রশ্ন, ‘‘দিনহাটায় ভোটের বাক্সে জল ঢালল কারা? রানিনগর, রেজিনগরে মারা গেল কারা? বাদুড়িয়ায় ছাপ্পা ভোট দিল কারা?’’ তাঁর পাশে বসে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণালের অভিযোগ, ‘‘ভোট হয়েছে উৎসবের মেজাজে। তৃণমূল ও বাংলার বিপক্ষে চক্রান্ত করেছিল বিরোধীরা। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস ও আইএসএফ মিলে পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ করেছে তৃণমূলকে। মৃতদের অধিকাংশই তৃণমূল।’’ এই সূত্রেই রাজ্যপালকে নিশানা করে উনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল এ সবে উস্কানি দিয়েছেন। প্ররোচনা দিয়েছেন।’’ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর অবদান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী শশাঙ্ক পাঁজা। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় ছিল? কী করছিল?’’

সকালে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামে ইলেকশন দেওয়ার পরই রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় অশান্তির খোজ-খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনারকে নিশানা করেন শুভেন্দু। উনি বলেন, ‘‘”দিল্লিতে কে, কী ভাববেন বা অন্যরা কে, কী ভাবছেন জানি না। আমি মায়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে বাংলাকে পরিত্রাণ দিতে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে এসেছিলাম। বাংলার গণতন্ত্রকে বাঁচাতে প্রয়োজনে নিশান ছাড়া কিংবা পতাকা নিয়ে লড়ব।” এ দিন সন্ধ্যায় নির্বাচনী দ্বেষ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে কথা বলেছেন তিনি। রাজ্য বিজেপির অতুলনীয় মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্যের সাংবিধানিক অ্যারেঞ্জমেন্ট ভেঙে পড়েছে। ৩৫৬ বিধান চাইছেন।’’

Advertisement

এসইউসি-র রাজ্য এডিটর চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেন, “নির্বাচন ডিস্কাউন্ট তার সাথে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতায় শাসক দলের সমাজবিরোধীরা ভোটে অগণিত হত্যা করেছে। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে।” সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দাবি, ভোট গ্রহনের দিন ৩৫ জন রাজনৈতিক সহযোগী ও গ্রামীণ ভোটারের প্রাণহানিতে নির্বাচন মৃত্যুর ‘মহোৎসব’-এ রুপান্তর হল।

বিরোধীদের নালিশ ও কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি নস্যাৎ করে কুণালের জবাব, ‘‘কারা বলছে এ সব কথা! এইখানে ৩৫৫ বা ৩৫৬ বিধান প্রয়োগের আগে তা মণিপুরে কাযর্কর করুক। প্রকৃতপক্ষে পরাজয়ের আশঙ্কায় বিরোধী চূড়ান্ত অবসাদে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসা প্রয়োজন।’’

আরও পড়ুন

Latest articles

Leave a Comment

%d bloggers like this: