১৭ মাস বেতন হয়নি, তবু চন্দ্রযান উৎক্ষেপণের জন্য দিনরাত এক করে কাজ কয়েকশো ইঞ্জিনিয়ারের

Staff Reporter

১৭ মাস বেতন হয়নি, তবু চন্দ্রযান উৎক্ষেপণের জন্য দিনরাত এক করে কাজ কয়েকশো ইঞ্জিনিয়ারের

কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থায় কাজ করেন প্রায় তিন হাজার ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মী। কিন্তু এক বছর পাঁচ মাস পারিশ্রমিক পাননি। তবু ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে নানারকম কঠোর যন্ত্রাংশ তৈরি করে গিয়েছেন তাঁরা।

প্রায় তিন বর্ষের ক্লান্তি হীন পরিশ্রমের শেষে সাফল্য। শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ হতে ‘চন্দ্রযান-৩’-এর উৎক্ষেপন সাকসেস হয়েছে। ইসরোর এই চন্দ্রাভিজানে বিজ্ঞানীদের একসাথে প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন অনেক মানুষ। সেই তালিকায় রয়েছেন রাঁচীর ‘হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ (এইচইসি) সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার, পদস্থ অফিসার থেকে সাধারণ কর্মীরা। ‘চন্দ্রযান-৩’-এর উৎক্ষেপনে ভূমিকাও কিছু কম নয়। যদিও গত ১৭ মাস বিনা পারিশ্রমিকেই যাবতীয় কাজ করে গিয়েছেন তাঁরা। একাধিক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বার বার কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানোর পরেও দেড় সালের অধিক টাইম ধরে বেতন পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্থ ওই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মীরা। তার পরেও তাঁরা দিন রাত এক করে কাজ করে গিয়েছেন। রাঁচীর ওই রাষ্ট্রীয় অধীনস্থ কোম্পানী থেকে ‘চন্দ্রযান-৩’ উৎক্ষেপণের ‘লঞ্চিং প্যাড’ হতে বিবিধ কঠোর যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা সে সব সৃষ্টি করলেন, তাঁরা কেন মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না?

অনেক দিন ধরেই ধুঁকছে এইচইসি সংস্থাটি। তথ্য বলছে, গত ৩ বছর ধরে আর্থিক সমস্যার ভিতরে বিদ্যমান রাষ্ট্রায়ত্ত ওই কোম্পানি। ওয়াকিবহালদের অধিকাংশই এই সংস্থার পরিস্থিতির সাথে কেন্দ্রীয় টেলিকম সংগঠন বিএসএনএলের তুলনা টানেন। ওই কোম্পানিরই প্রায় তিন হাজার ইঞ্জিনিয়ার থেকে সহযোগীরা গত ১৭ মাস পারিশ্রমিকের কানাকড়িও পাননি বলে অভিযোগ। সংস্থার জয়েন্ট সেক্রেটারি তথা ইঞ্জিনিয়ার সুভাষচন্দ্র ‘চন্দ্রযান-৩’-এর সফল উৎক্ষেপণের পর উচ্ছ্বসিত। তা সত্ত্বেও তাঁর সহকর্মীদের পারিশ্রমিক নিয়ে প্রশ্ন করায় সংবাদমাধ্যম নিউজ়-১৮-কে সুভাষ জানান, এটা নির্ভুল যে, কর্মীরা আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। অথচ তার পরেও শুক্রবার থেকে সবাই খুব আনন্দিত। সুভাষের কথায়, ‘‘আবার এক বার এইচইসি-র সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মী গর্বের সঙ্গে মাথা খানদানি করে দাঁড়িয়েছেন। দেশের এমন ১টি বিশাল এবং তাৎপর্যপূর্ণ প্রকল্পের অংশ হয়েছি। এতে আমরা গর্বিত। আমরা ভীষণ খুশি।’’

Advertisement

কেন্দ্রের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউজ়-১৮ বলছে, একাধিক বার ভারী শিল্প মন্ত্রকের নিকট বকেয়া চেয়ে চিঠি দিয়েছে এইচইসি। কিছু দিন আগেই ১,০০০ কোটি টাকা চেয়ে দরবার করেছে তারা। অথচ সদ্‌র্থক সাড়া মেলেনি। মন্ত্রকের তরফে না কি জানানো হয়ে গিয়েছে যে, সরকারের তরফে এখনই কোনও সাহায্য মিলছে না। বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বর্ষের ৩ নভেম্বর হতে চলমান বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ধর্মঘট করেন। সঙ্গে সঙ্গে দু’মাসের বেতন এবং বকেয়া বেতন জলদি মিটিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার দেওয়ার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেন রাঁচীর বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় শেঠ।

অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় অধীনস্থ সংস্থার দেনা বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় গিয়ে তারা পৌঁছেছে যে, কর্মীদের বেতন অফ হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র তাই-ই নয়, আর্থিক দুরবস্থার কারণে ২ বছর হয়ে গেল ওই সংস্থায় কোনও স্থায়ী ‘চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর’ বা সিএমডি-র নিয়োগ হয়নি। উল্লেখ্য, ‘চন্দ্রযান-৩’ উৎক্ষেপনের একটানা প্রজেক্টে হয়েছে প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

Latest articles

Leave a Comment

%d bloggers like this: