চাঁদের মাটিতে কেবল বৈজ্ঞানীক তথ্য খোজ আর মাটি-পাথর সংগ্রহ নয়, ভারতের ‘উপস্থিতি’ প্রমাণ করবে রোভার প্রজ্ঞানে পাঠানো ‘অশোক স্তম্ভ’ এবং ইসরোর প্রতীকের ছাপ।
চন্দ্রযানে যদি পাঁচটি জিনিস পাঠাতে হয়, তা কী কী থেকে পারে? ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের আহে টুইটারে আনন্দ করে জানতে চেয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ তত্ত্বানুসন্ধান সংস্থা (ইসরো)। তার জবাবেই টুইটারে উঠে এসেছিল দীর্ঘ তালিকা। গঙ্গাজল থেকে ব্যাকটিরিয়া, দেশের মাটি হতে প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি তথা বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালামের ছবি পর্যন্ত অনেক কিছুই ছিল সেই তালিকায়।
ইসরোর ৩য় চন্দ্রাভিযানে এ বার স্থান পেয়েছে সেই তালিকার দুই জিনিস— অশোক খুঁটি এবং ইসরোর প্রতীক। চাঁদের মাটিতে কেবল বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসন্ধান আর মাটি-পাথর সংগ্রহ নয়, ইন্ডিয়ার ‘উপস্থিতি’ প্রমাণ করবে রোভার প্রজ্ঞানে পাঠানো ‘অশোক স্তম্ভ’ এবং ইসরোর প্রতীকের ছাপ। যার মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে এঁকে দেওয়া হবে মৌর্য সম্রাট অশোক নির্মিত সারনাথের সেই তিন সিংহ। যা আজকাল ভারতের জাতীয় প্রতীক। পাশাপাশি, অঙ্কন করে হবে ইসরোর প্রতীকও।
ইসরোর তরফে বলা হয়েছে প্রায় ৪০ দিন পরে, আগামী ২৩ বা ২৪ অগস্টের ভিতরে চাঁদের মাটিতে নামতে পারে চন্দ্রযান-৩-এর সৌরচালিত ল্যান্ডার বিক্রম। সেখান হতে সৌরচালিত রোভার প্রজ্ঞান বেরিয়ে চাঁদের মাটি ছোঁবে। চাঁদের মাটির চরিত্র, নানারকম খনিজ পদার্থের উপস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য কালেক্ট করবে। পাশাপাশি, যে অঞ্চল দিয়ে প্রজ্ঞান চলাচল করবে সেখানকার চাঁদের জমিতে অশোকস্তম্ভ এবং ইসরোর প্রতীক অঙ্কন করে হবে।
শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ হতে সাকসেস উৎক্ষেপণ হয়ে গিয়েছে চন্দ্রযান-৩-এর। কিন্তু চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য পাড়ি দিতে হবে এইরকম অনেকটা পথ। যদি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ হতে ল্যান্ডার বিক্রম সাকসেস ভাবে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারে তার সাথে তার পরে রোভার প্রজ্ঞানকে নির্ভুল ভাবে অবতরণ করাতে পারে, তবে ভারতীয় মহাকাশ অভিযানের অতীত বৃত্তান্ত নতুন মাত্রা পাবে। সে ক্ষেত্রে গত এক দশকে চিনের পর আরও কোনও রাষ্ট্রের মহাকাশযান সাকসেস ভাবে চাঁদে অবতরণের নিদর্শন গড়বে। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসাবে লিস্টে ঠাঁই পাবে ভারত।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৭ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘সিমপেলিয়াস এন’ তার সাথে ‘ম্যানজিনাস সি’ নামে দু’টি গহ্বরের মাঝখানে চন্দ্রযান ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণের ট্রাই করেছিল (এ বারও অবতরণ হবে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলেই)। অথচ তা সফল হয়নি। পেটের ভিতরে রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে অবতরণের তিন মিনিট প্রথমে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বিক্রম। মাস তিনেক ধরে বিক্রমের ধ্বংসাবশেষের অনবরত খোঁজ চালিয়েছিল আমেরিকার মহাকাশ তত্ত্বানুসন্ধান সংস্থা নাসা। তবুও কোনও ভাবেই তা মার্ক করতে পারেনি তারা। শেষমেশ ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার’ (এলআরও)-এর তোলা ১টি ছবি শেয়ার করে বিশ্ববাসীর নিকট হেল্প চায় নাসা। সেই পিকচার দেখে চেন্নাইয়ের এক জন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিক্রমের ধ্বংসাবশেষ মার্ক করেন।