এত মূল্য কেন সব্জির?

Staff Reporter

এত মূল্য কেন সব্জির? কবে কমবে? চাষির বাড়ি থেকে পাইকারি বাজার ঘুরে দেখল আনন্দবাজার

খুচরো মার্কেটে যখন আনাজের প্রাইস অগ্নি তখন পাইকারি বাজারে চাষি ও বিক্রেতাদের বক্তব্যে উঠে এল মূল্যবৃদ্ধির নানা কারণ। কেন এত দাম? কবে কমবে? এ সবের উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।

আনাজ-বাজারে ঢুকতেই ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নটা কানে আসছে, কবে কমবে? যে যা কিনছেন, দোকানিকে ঘুরেফিরে একটাই কথা, এত দাম! দোকানিরাও জবাব দেওয়ার জন্য দিতে নাজেহাল! তবু ক্রেতারা খুশি নন। মার্কেটে গিয়ে তো এই সপ্তাহে খানিক থমকেই গিয়েছেন প্রীতম রায়। একেবারে ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ অবস্থা। দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের নামী জুতোর শোরুমে কাজ করেন ডানকুনির প্রীতম। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই তিনি বেশ অল্পসংখ্যক বছর ধরে বাজার করেন। মূলত মাছ-মাংস-আনাজ ইত্যাদি। কিন্তু এই মঙ্গলবার সেই আনাজ কিনতেই গত সপ্তাহের হতে অন্তত ৪০০ টাকা অধিক খরচ হয়ে গেল! কোনওটার মূল্য গত সপ্তাহের থেকে দ্বিগুণ, কোনওটা তিন গুণ, কোনওটা আবার প্রায় পাঁচ গুণ!

অশোকনগরের ধ্রুব গঙ্গোপাধ্যায় এইরকম চমকেছেন। কারণ, তাঁর পরিজন মূলত নিরামিষভোজী। মহাবিদ্যালয় স্ট্রিটে ১টি বইয়ের দোকানে কাজ করা ধ্রুব সপ্তাহের বাজার করেন ছুটির দিনে। তাঁর সাপ্তাহিক বাজার খরচা এই মঙ্গলবার আগের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৬৫০ টাকা!

Advertisement

বিরাটি কলেজের শিক্ষিকা শুচিস্মিতা সেন চৌধুরী সল্টলেকের বাসিন্দা। রবিবার সপ্তাহের বাজার করতে গিয়ে বুঝেছিলেন, খরচ হঠাৎ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। প্রায় সাড়ে ৫০০ টাকা! মঙ্গলবার বিশেষ প্রয়োজনে টোম্যাটো আর ধনেপাতা কিনতে গিয়ে দেখেন, দাম এইরকম বেড়েছে। কমার কোনও লক্ষণই নেই!

প্রীতম, ধ্রুব, শুচিস্মিতার এক্সপেরিয়েন্স প্রকৃতপক্ষে আস্ত বাংলারই। জবাব হতে দক্ষিণবঙ্গ, পর্বত হতে সাগর— দামের নিরিখে ট্রিপল সেঞ্চুরি লঙ্ঘন করেছে কাঁচালঙ্কা, আদা। সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছে টোম্যাটো। আদার্স আনাজও মার্কেটপ্লেসে বিকোচ্ছে আকাশছোঁয়া দরে। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, জবাব ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের নানারকম জেলায় বিপুল ভাবে আনাজের চাষ হয়। শুরুতে পাইকারি বাজার তার পর সেখান থেকে খুচরো বিক্রেতাদের হাত ধরে সেই আনাজ পৌঁছয় সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে। যে আনাজ খুচরো বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে, পাইকারি মার্কেটে তার মূল্য কত? কৃষকদের পকেটে কি সেই অনুপাতে টাকা ঢুকছে? আদার্স বছর এই সময়ে আনাজের প্রাইস নাগালে থাকলেও এ বার কেন তা এত ‘বেপরোয়া’? আনাজের খুচরো বাজার যখন দামে টগবগ করছে তখন পাইকারি বাজারে ঢুঁ দিতেই চাষি তার সাথে বিক্রেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে মূল্যবৃদ্ধির নানা কারণ। কেন এত দাম? কবেই বা কমবে? এ সবের উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।

মূলত ধান ও আলু চাষের জন্য নামযশ আছে হুগলির। অথচ সেচের সুবিধার জন্য জেলার অধিক জমিই তিন ফসলি। আবার আনাজ চাষও ভাল হয় ভাগীরথীর পারের জমিতে। সিঙ্গুর, নালিকুল, তারকেশ্বর, পোলবা-দাদপুর তার সাথে বলাগড়ে উৎপন্ন আনাজের কিছুটা বিক্রি হয় স্থানীয় হাটে। তবে বেশির ভাগটাই পৌঁছয় শেওড়াফুলি, গুপ্তিপাড়া, ব্যান্ডেল, চন্দননগরের বৌবাজার, সিঙ্গুরের নান্দাবাজার, পোলবার সুগন্ধা বাজারের মতো আড়তগুলিতে। সেখান হতে সেই আনাজ পৌঁছে যায় রাজ্যের নানারকম প্রান্তে। এমনকি, ভিন্‌রাজ্যেও। হুগলির সুগন্ধা গোটু বাজারের পাইকার তাপস পালের কথায়, ‘‘বাজারে সব্জির জোগান কম। অথচ চাহিদা বেশি। তাই দাম বাড়ছে। আমরা কলকাতার বাজারগুলিতে সব্জি পাঠাই। বিহার, ঝাড়খণ্ডেও যায়। কিন্তু বহু দামে সব্জি কিনে পড়তা করা যাচ্ছে না।’’

Advertisement

এ রাজ্য হতে যেমন আনাজপাতি প্রতিবেশী রাজ্যে যায়, তেমন তার উল্টোটাও হয়। পাইকারদের একাংশের দাবি, গাজর, টোম্যাটো, ফুলকপি, সজনেডাঁটা, আদা বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। ঝাড়খণ্ডের রাঁচী থেকেও পর্যাপ্ত আনাজ আসে এ রাজ্যের নানারকম বাজারে। সে সবের দামও চড়া। এ জন্য জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

অন্য দিকে, এ রাজ্যে আনাজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসাবে পর্যাপ্ত ব্যবসায়ীই মণিপুর সঙ্কটের কথা বলছেন। ওঁদের মতে, রাজ্যে আদার ফলন হলেও তার মান ভাল নয়। উচ্চ মানের আদা আসে মণিপুর থেকে। অথচ মণিপুর এখন ‘অশান্ত’। ফলে আদার প্রাইস বেড়েছে বলেই দাবি করছেন পাইকাররা। কোচবিহারের আনাজ ব্যবসায়ী অতুল বর্মণের যুক্তি, ‘‘উত্তরবঙ্গে বর্ষা না কমলে আনাজের মূল্য এইরকম বাড়তে পারে। আমাদের রাজ্যে মণিপুর আর ভুটান থেকে আদা আমদানি হয়। অথচ মণিপুর অশান্ত থাকার কারণে সেখানকার আদা এ দিকে আসতে পারছে না। আদার মূল্য বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ এটাই।’’

যে কাঁচালঙ্কা সপ্তাহখানেক আগেই ১০০ টাকা কেজি ছিল, সেটাই অধুনা সাড়ে ৩০০ লঙ্ঘন করেছে। তবুও বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজারের পাইকারি সব্জি ব্যবসায়ী জয়ন্ত হাটির আবার উল্টো মত। জয়ন্ত বলছেন, ‘‘শনিবার দু’লরি কাঁচালঙ্কা ঢুকেছে বাজারে। তাতেই লঙ্কার মূল্য একেবারে স্বাভাবিক জায়গায় চলে এসেছে। রবিবার পাইকারি মার্কেটে লঙ্কা কিলোগ্রাম প্রতি বিক্রি হয়ে গিয়েছে ৭০ টাকায়। খুচরো বাজারে কাঁচালঙ্কা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কিলো দরে। দাম কমেছে আদারও। কিলোগ্রাম প্রতি তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।’’ যদিও বর্ধমান শহরের বাসিন্দা অভিজিৎ সাধুর অভিজ্ঞতা অন্য। উনি বলছেন, ‘‘সোমবার সকালেও ৩০০ টাকা কেজি দরে কাঁচালঙ্কা কিনেছি। আলয় আলয় যাঁরা ঠেলাগাড়ি করে আনাজ আনেন, তাঁরা বিক্রি করেছেন সাড়ে ৩০০ টাকায়।’’

Advertisement

আনাজের এই চড়া দর নিয়ে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দুষছেন অনেকে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের রামপুর পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী বরুণ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘গত বছর এই সময়ে গ্রীষ্মকালীন সব্জি বিক্রি হয়ে গিয়ে ছিল জলের দরে। ঝিঙে, করলা এবং ঢেঁড়সের ভ্যালু মার্কেটপ্লেসে এতটাই নেমে গিয়েছিল যে মাঠ থেকে সব্জি তোলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন চাষিরা। ওই রকম লোকসানের ভয়ে এ বার বাঁকুড়ার কৃষকদের অনেকেই সব্জি চাষে বিশেষ প্রবৃত্তি কম দেখিয়েছেন। ফলে উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় আনাজের দর চড়া।’’

একই কথা বলছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জলঘর এলাকার কৃষিজীবী সুনীল বর্মণ। তাঁর কথায়, ‘‘তীব্র গরমের পর সহসা করে টানা সাত দিনের বৃষ্টিতে পটল, ঝিঙে, ঢেঁড়স এবং কাঁচালঙ্কা গাছে যা পুষ্প এসেছিল তা নষ্ট হয়েছে। একটানা গরমের পর আচমকা আবহাওয়ার এই বদলের সঙ্গে গাছ নিজেকে মানিয়ে ফসল দেওয়ার জন্য সময় লাগবে আরও দিন দশেক। কারণ এখনও সাবেকি প্রক্রিয়ায় চাষ হয়। তার ফলে প্রতি বারই কাল বদলের সময় এক বার করে সব্জির দাম বৃদ্ধি পায়।’’

উত্তরবঙ্গের চাষি সুনীলের সঙ্গে সহমত আসানসোলের সব্জি বিক্রেতা গণেশ দেবনাথও। আবার বাঁকুড়ার বড়জোড়ার মানাচর গ্রামের কৃষক পবিত্র সরকারও একই কথা বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ বছর টানা গরমে এমনিতেই ঝিমিয়ে পড়েছিল বিভিন্ন সব্জির গাছ। তার ওপর অকস্মাৎ বৃষ্টি হওয়ায় অর্ধেকের বেশি সব্জি পচে গিয়েছে। লঙ্কার পল্লব কুঁকড়ে যাওয়ায় ফলন একেবারে কম। এই সিচুয়েশনে লোকসান পোষাতে বশীভূত হয়ে প্রাইস বাড়াতে হচ্ছে।’’ হুগলির পোলবার সব্জি কৃষক প্রদীপ মালিকও বলছেন, ‘‘প্রচণ্ড গরমে লতানো উদ্ভিদের ফসল বিকৃত হয়েছে। পটল, ঝিঙে, করলা, লাউয়ের ফুল বিকৃত হয়েছে গরমে। ফলে ফলন কম। সময়ে পানি না হওয়ায় চাষ ভাল হয়নি। আষাঢ় মাসের অনেকগুলি দিন পেরিয়ে গেলেও বর্ষার দেখা নেই। বৃষ্টি না হলে এই সমস্যা মিটবে না।’’

Advertisement

উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত সব্জির ১টি বড় অংশ যায় দার্জিলিং, সিকিম এবং উত্তর-পূর্ব ইন্ডিয়ার রাজ্যগুলিতে। জোগান কম পড়ায় কোপ পড়েছে সেই রফতানিতে। এ জন্য বৃষ্টিকেই দায়ী করছেন ময়নাগুড়ি, ধুপগুড়ি, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, কানকি, ফাঁসিদেওয়ার কৃষকেরা। শিলিগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজার (রেগুলেটেড মার্কেট)-এর ব্যবসায়ীদের মতে, শিলিগুড়ি তার সাথে সংলগ্ন অঞ্চলে ওই সব এলাকার কৃষকেরা ডিমান্ডের প্রায় ৭০ শতাংশ জোগান দিতেন। তবুও এ বার সেই জোগানের হিসাব নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে। ডিমান্ড একই হতে যাওয়ায় অবস্থা সামাল দিতে হলো বিহার, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটকের মতো রাজ্য থেকে আমদানি করে। সে কারণেই এই মূল্যবৃদ্ধি বলে মনে করছেন তাঁরা। ফাঁসিদেওয়ার চাষি বিক্রম রায়ের কথায়, ‘‘কাঁচালঙ্কা, টোম্যাটোর মতো সব্জি হিমঘরে রাখার জিনিস নয়। ফলে বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হচ্ছে। তার সাথে বিক্রি করার জন্য হচ্ছে বেশি দামেই।’’

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, আমডাঙা, স্বরূপনগর, হাড়োয়া, বাদুড়িয়া, দেগঙ্গার মতো জায়গাতেও আনাজের চাষ হয় বিপুল। ওই এলাকার চাষিদের একাংশ আবহাওয়াকে দায়ী করলেও দেগঙ্গার চাষি আব্দুল খালেক অবশ্য শোনাচ্ছেন ভিন্ন কথা। তাঁর দাবি, ‘‘সারের মূল্য বৃদ্ধির ইফেক্ট পড়েছে সব্জি চাষে।’’ হাড়োয়ার সব্জি বিক্রেতা পঙ্কজ বিশ্বাস আবার এ জন্য পুলিশের ভূমিকাকে দায়ী করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরে থেকে সব্জি নিয়ে এলে নানারকম জায়গায় পুলিশকে টাকা দেওয়ার জন্য হচ্ছে। সেই কারণেও ভ্যালু বেড়ে যাচ্ছে।’’

আনাজের দর বৃদ্ধির এইরকম গোটা আষ্টেক কারণ উঠে আসার পর স্বভবতই প্রশ্ন জাগে, এতে কি চাষীর ক্ষতির বোঝা কিছুটা হলেও কমেছে? খুচরো ক্রেতা যে দামে আনাজ কিনছেন, তার সমানুপাতে অর্থ কি চাষীর পকেটে যাচ্ছে?

Advertisement

নদিয়ার করিমপুরের অধিবাসী আলতাফ হোসেনের এক্সপেরিয়েন্স শোনার পর তেমনটা বোধ হয় না। আলতাফের জামাই রেলকর্মী। পোস্টিং উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে। জামাইয়ের কাছে কলকাতার মার্কেটপ্লেসে আনাজের আকাশছোঁয়া দামের কথা শুনে রবিবার ৬০ কেজি পটল নিয়ে স্থানীয় আড়তে গিয়েছিলেন তিনি। ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষার পরে ১৯ টাকা কেজি দরে আড়তে পটল বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু আলতাফ শুনেছেন খুচরো বাজারে পটলের দাম ৬৫ হতে ৭০ টাকা কিলো। খুচরো এবং পাইকারি মার্কেটপ্লেসে সব্জির দামের এই বিস্তর ফারাক নিয়ে ‘মধ্যসত্ত্বভোগী’দেরই দায়ী করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তো প্রান্তিক। চাষির কথা আর কে ভাবে বলুন! পরিশ্রমের খরচও ওঠে না আজকাল চাষ করে।’’ একই কথা বলছেন নদিয়ারই মহিষবাথানের বেগুনচাষি রমেন মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘চারদিক হতে শুনতে পাচ্ছি সব্জির খুচরো মূল্য আকাশছোঁয়া। তবুও আমরা পাচ্ছি কই? এই দফায় বেগুনের মূল্য কিলোগ্রাম প্রতি বেড়েছে মোটে ৪-৫টাকা!’’ হুগলির চুঁচুড়ার খড়ুয়া বাজারের সব্জি বিক্রেতা রঞ্জন রায় যেমন বলেই দিলেন, ‘‘আমরা যে দামে সব্জি কিনি তার থেকে ১০-২০ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি। অথচ এত মূল্য হলে লোক কিনবে কী করে? সব্জি বিক্রি না হওয়ায় পচে বিকৃত হচ্ছে। এতে আমাদের মতো খুচরো বিক্রেতাদের ক্ষতি হচ্ছে। মূল্য কম থাকে তাহলে আমাদেরই ভাল।’’

নদিয়ার তেহট্টের বেতাই বাজারে কাঁচালঙ্কা কিনতে এসেছিলেন শিয়ালদহের ব্যবসায়ী শুভঙ্কর সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য দিন যেখানে ২০-২৫ কুইন্টাল লঙ্কা আসে, আজ ওখান মাত্র দেড় কুইন্টাল এসেছে! ফাঁকা গাড়িতে ভাড়ার পয়সা তুলব কী ভাবে? ফলে মূল্য স্বাভাবিক ভাবেই বাড়বে।’’

খুচরো ব্যবসায়ীদের আবার দাবি, আনাজের দর বাড়লেও ওঁদের লাভে মন্দা লক্ষ্য দিয়েছে। কারণ, প্রাইস বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা পূর্বের হতে কম সংখ্যায় আনাজ কিনছেন। হাওড়ার খুচরো ব্যবসায়ী প্রশান্ত দাসের ব্যাখ্যা, ‘‘পাইকারি মার্কেটপ্লেসে প্রাইস চড়া সব্জির। এর পর মুনাফা রাখার জন্য আমাদের মতো খুচরো ব্যবসায়ীরা দর বাড়াতে আয়ত্ত হচ্ছেন। অথচ সাধারণ ব্যক্তি সব্জি কেনার সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে আমাদের ব্যবসায় মন্দা লক্ষ্য দিয়েছে।’’

Advertisement

এই অবস্থায় আশার কথা শোনালেন দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির কৃষক বিজন মালি। তাঁর দাবি, ‘‘পুরনো উদ্ভিদের সিজ়ন শেষ। একারণে কাঁচালঙ্কার উদ্ভাবন কমেছে। লঙ্কা তার সাথে বেগুন গাছ নতুন করে বসানো আরম্ভ হয়েছে। আত্রাই, টাঙন, পুনর্ভবা নদীর দু’পাশে সব্জি চাষ হয়। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই বর্ষার পানি পেলে বৃক্ষে আবার নিউ ফসল পাওয়া যাবে।’’ আশার আলো দেখাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের পাইকারি সব্জি ব্যবসায়ী প্রদীপ শেখও। মাসখানেকের ভিতরে ভ্যালু আয়ত্তে আসবে বলে মনে করছেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বাগদা গ্রামের চাষি কার্তিক বেরারও দাবি, ‘‘সবেমাত্র বর্ষা চালু হয়েছে। নতুন তরু সমৃদ্ধ হচ্ছে। নিউ সব্জি বাজারে আসতে আরও দিন পনেরো লাগবে। তত ক্ষণ পর্যন্ত অগ্নিমূল্য কমার সম্ভাবনা কম।’’

কেউ বলছেন দিন পনেরো, কেউ বা আবার মাসখানেক! তবে কি অতিশয় শীঘ্রই আনাজের দাম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই?

নবান্নের নির্দেশে ইতিমধ্যেই কলকাতার নানারকম বাজার ঘুরে দেখতে আরম্ভ করেছে টাস্ক ফোর্স। সোমবার সল্টলেক, ব্যারাকপুর, হাওড়া তার সাথে বারুইপুর এই চার এলাকার বাজার ঘুরে দেখে ওই দলটি। সল্টলেকের দলে ছিলেন টাস্ক ফোর্সের সেরা মেম্বার রবীন্দ্রনাথ কোলে-সহ অন্যেরা। বিক্রেতাদের কাছ হতে সব্জির দামের তালিকাও নেন তাঁরা। কয়েকটি কয়েকটি ক্ষেত্রে দর বহু বলেই টাস্ক ফোর্সের ধারণা। মঙ্গলবার কোলে মার্কেটের মতো পাইকারি বাজার দেখে সৃষ্টি করা হবে রিপোর্ট। তা পাঠানো হবে রাজ্যের কাছে। ওই কর্মচারী দলের দাবি, আগামী দিন পনেরোর মধ্যে কমবে দাম। পরে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘এ বার সারা দেশ জুড়ে অনেক গরমের জেরে লতানে বৃক্ষ মরে গিয়েছে। তার ফলে সব্জির চাহিদা তার সাথে জোগানের তারতম্য ঘটেছে দারুণ ভাবে। সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। দেশ জুড়ে প্রতি বছর টোম্যাটোর সঙ্কট দেখা দেয় এই সময়ে। রিজন এই টাইমে ফলন কমে যায়। তা হিমঘরেও রাখা যায় না। তার ফলে এই অবস্থা লক্ষ্য দেয়।’’ তাঁর মতে, আগামী দিন পনেরোর মধ্যেই সিচুয়েশন স্বাভাবিক হতে আরম্ভ করবে। রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘সোমবার টাস্ক ফোর্স বেরোনোর পর কাঁচালঙ্কা কিলোগ্রাম প্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তার কারণ লঙ্কার জোগানও বেড়েছে। কলকাতা তার সাথে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি হাওড়ার সব্জি বাজারেও সোমবার টাস্ক ফোর্স যায়। মঙ্গলবার হুগলির বৈদ্যবাটী তার সাথে চন্দননগরেও টাস্ক ফোর্স যাবে। সকলে মিলে উদ্যোগ চালাচ্ছি। খুব তাড়াতাড়ি এর ফল পাওয়া যাবে। আমাদের লক্ষ্য, কেউ যেন এই টাইমে চান্স নিয়ে অন্যায় কাজ না করেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন

Latest articles

Leave a Comment

%d bloggers like this: